অকল্যান্ড, লর্ড

অকল্যান্ড, লর্ড (১৭৮৪-১৮৪৯)  ১৮৩৬ থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। ১৭৮৪ সালের ২৫ আগস্ট, কেন্ট এর বেকেনহামে অকল্যান্ডের জন্ম। তিনি ইটন এবং অক্সফোর্ডের ক্রাইস্টচার্চ-এ শিক্ষা লাভ করেন। অকল্যান্ড ১৮৩৬ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। গভর্নর জেনারেল হিসেবে অকল্যান্ড বেন্টিঙ্ক-এর অভ্যন্তরীণ নীতি অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তাতে কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। শিক্ষা বিস্তার ও ভারতীয়দের মধ্যে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন এবং সেচ নীতির উন্নয়নে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কোম্পানির পরিচালকদের নির্দেশে তিনি তীর্থকর রহিত করেন এবং ধর্মীয় স্থাপনাসমূহের ওপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করেন। তবে উত্তর ভারতের ১৮৩৮ সালের ধ্বংসাত্মক দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।

লর্ড অকল্যান্ড

দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতি অকল্যান্ডের ভূমিকা প্রশ্নাতীত ছিল না। কোম্পানির বিরুদ্ধে পর্তুগিজদের সঙ্গে আতাঁতের অভিযোগে তিনি সাতারার রাজাকে অপসারণ করে তাঁর ভাইকে ক্ষমতায় বসান। কোম্পানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কারনালের নওয়াবকে অপসারণ করে রাজ্যটি ব্রিটিশ-ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেন। ১৮৩৭ সালে অযোধ্যার এক বিদ্রোহ দমন করে তিনি নতুন নওয়াব নাসিরুদ্দীন হায়দারকে অতিরিক্ত কর প্রদানের শর্ত সম্বলিত একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন। কোম্পানির পরিচালকরা এ চুক্তি বাতিল করে দেন, কিন্তু তিনি তা নওয়াবকে জানান নি।

তবে অকল্যান্ডের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আফগান সমস্যা। অবশ্য প্রথম ইঙ্গ-আফগানদের যুদ্ধে (১৮৩৮-১৮৪২) ইংরেজরা তেমন কোনো সাফল্য পান নি। রাশিয়াপন্থী দোস্ত মুহম্মদ খানকে (১৮২৩ সালে তিনি আফগানিস্তানের আমির হন) সরিয়ে তিনি আফগানিস্থানের আমির পদে ব্রিটিশপন্থী শাহ সুজাকে বসিয়েছিলেন।

ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ সিন্ধুর আমিরদের সঙ্গে সদ্য স্বাক্ষরিত চুক্তিতে অকারণে ফাটল ধরায়। যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়েছিল আনাড়ির মতো এবং শেষ হয়েছিল ব্রিটিশদের জন্য ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে। লর্ড অকল্যান্ডকে ইংল্যান্ডে ডেকে পাঠানো হলে ১৮৪২ সালের ১২ মার্চ তিনি দেশে ফিরে যান। অকল্যান্ডকে আর্ল এবং নরউডের ব্যারন ইডেন উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

অকল্যান্ডের মৃত্যু হয় ১৮৪৯ সালের ১ জানুয়ারি। [কে.এম মোহসীন]