বোলতা
বোলতা (Wasp) কীটপতঙ্গদের বর্গ Hymenoptera-এর কয়েকটি গোত্রের সদস্যদের সাধারণ নাম। উদরের গোড়ায় সংকীর্ণ কোমরের মতো অংশ এবং স্ত্রী পতঙ্গে বিষগ্রন্থিসহ হুলের উপস্থিতি এদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৭,০০০ প্রজাতির বোলতা আছে, যদিও উষ্ণমন্ডলীয় দেশগুলিতে এদের বেশি দেখা যায়। শীতপ্রধান দেশগুলি থেকে মাত্র অল্প কয়েকটি প্রজাতির বর্ণনা হয়েছে।
অধিকাংশ বোলতার দেহ সরু, চারটি ডানাই উপস্থিত এবং দেহের রং সাধারণত উজ্জ্বল নীল, কালো, হলুদ অথবা লালচে। তবে অসংখ্য প্রজাতিতে একাধিক রঙের সমাহার দেখা যায়। অনেক প্রজাতিতে ডোরা দাগ থাকে। বাংলাদেশে বোলতার সবগুলি গোত্রের প্রতিনিধি আছে এবং কোন কোনটি প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
![](/images/f/fd/WaspDigger.jpg)
![](/images/5/5e/WaspYellowJackat.jpg)
কীটপতঙ্গদের মধ্যে বোলতা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এরা মৌমাছি ও পিঁপড়ার নিকট জ্ঞাতি। এদের কতক নিজেদের তৈরি বাসায় দলবদ্ধভাবে বাস করে এবং কাজের দায়দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। এ ধরনের বোলতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হর্নেট (hornet) এবং হলুদ বোলতা (yellow jackets)। উভয় দলই Vespidae গোত্রের। মৌমাছি ও পিঁপড়ের মতো এদের কলোনিতেও থাকে রানী, পুরুষ বোলতা এবং শ্রমিক। অন্য আর সব বোলতা সাধারণত কলোনিবদ্ধ হয়ে বাস করে না এবং তাদের মধ্যে এমন জাতভেদ নেই; নিজ নিজ বাসা আলাদাভাবে নিজেরাই তৈরি করে। এ ধরনের বোলতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ম্যাসোন (mason), কার্পেন্টার (carpenter) এবং গর্ত খননকারী (diggers) বোলতা।
সামাজিক আচরণ প্রদর্শন করে যেসব বোলতা তারা বিশ্রামের সময় দেহের উপরিভাগে ডানা ভাঁজ করে রাখে। এদের বাসা বানাবার ধরনও ভিন্ন প্রকৃতির। পুরানো নরম কাঠ এবং উদ্ভিদের অাঁশ একত্রে মিশিয়ে, চিবিয়ে লালার সংমিশ্রণে কাগজের মতো এক ধরনের পদার্থ তৈরি করে তা দিয়ে বাসা বানায়। একাকী বা নিঃসঙ্গ জীবন কাটায় এমন বোলতারা বিশ্রামের সময় ডানা রাখে দেহের উপরিভাগে, কখনো কখনো কিছুটা কোণাকারভাবে। এদের বাসা তৈরির পদ্ধতিও অতি বৈচিত্র্যময়। কেউ কেউ কাদা দিয়ে হাড়ির মতো বাসা বানায় যার আকৃতি প্রজাতিভেদে ভিন্নতর। বাড়িঘরে দরজা-জানালার কার্নিশে, কাঠের আসবাব পত্রের গায়ে অথবা তার মধ্যে গর্তকরে সেখানে এরা বাসা বানায়। অনেক প্রজাতি উঁচু জায়গায় মাটি খুঁড়ে বিশেষ ধরনের সুড়ঙ্গ বা গর্ত করে সেখানে ডিম পাড়ে।
কোন কোন বোলতা ফলমূলের ক্ষতি করে। তবে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও শুঁয়াপোকা দমনে এদের জুড়ি নেই। পরিণত বয়সে বোলতা ফুলের নির্যাস ও ফলের রস খায়; এদের লার্ভা আহার করে নানা ধরনের কীটপতঙ্গ ও মাকড়সা যা তাদের মায়েরা ডিম পাড়ার সময় বাসায় এনে মজুত রাখে। [বদরুল আমিন ভুঁইয়া]